আইসিডিডিআরবি অতিমাত্রায় জ্বরে ভুগছে এমন শিশুদের জ্বরজনিত খিঁচুনি সাধারণত দেখা যায়। যে শিশু কানের প্রদাহ, সংক্রমণ, ঠাণ্ডা, সর্দি, ইত্যাদিতে বেশি মাত্রায় ভুগে থাকে, সে শিশু জ্বরজনিত খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়। কিছু মারাত্মক সংক্রমণও এ খিঁচুনির কারণ হতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি।
এ ধরনের খিঁচুনির ক্ষেত্রে কারণ শনাক্ত করে যদি চিকিৎসাসেবা দেয়া যায়, তবে, কোনো রকম স্থায়ী ক্ষতি ছাড়াই শিশুকে সুস্থ করা যায়।
জ্বরজনিত খিঁচুনি কেন ও কাদের হয়
শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এমন যে কোনো অসুখই এ ধরনের খিঁচুনির জন্য দায়ী। এটি কোনো অসুখ নয়, অন্য কোনো অসুখের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কতগুলো রোগ আছে যেগুলো খিঁচুনির কারণ হিসেবে চিহ্নিত। যেমন-
* কানে প্রদাহ এবং সংক্রমণ
* সর্দি, কাশি ও ঠাণ্ডা লাগা
* ইনফ্লুয়েঞ্জা
* ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোনো অসুখ
* নিউমোনিয়া
* মেনিনজাইটিস
* কিডনির সংক্রমণ
সাধারণত ছয় বছর বয়সের আগে শতকরা ৩ জন শিশু এ ধরনের খিঁচুনিতে ভুগে থাকে। তবে, খিঁচুনি বেশি হতে দেখা যায় ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে। সাধারণত ৬ মাস বয়সের নিচে এবং ৬ বছরের পর জ্বরজনিত খিঁচুনি কম হতে দেখা যায়। জ্বরজনিত খিঁচুনি ৩ ধরনের হতে পারে :
সাধারণ খিঁচুনি (২০ জন আক্রান্ত শিশুর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে) : এই ধরনের খিঁচুনিই সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। শিশুর শরীর এতে লালচে রঙ ধারণ করতে পারে, শরীর শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং শরীর আঁকাবাঁকা আকার ধারণ করতে পারে। তবে, এই অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। শিশু কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে যেতে পারে। জ্বর কমে গেলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শিশু সুস্থ বোধ করতে শুরু করে। এ খিঁচুনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বারবার ফিরে আসে না।
অল্প জটিল ধরনের খিঁচুনি (২০ জন শিশুর মধ্যে ৪ জনের ক্ষেত্রে) : এটিও সাধারণ খিঁচুনির মতো। তবে, এতে আরও কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে, যেমন :
* খিঁচুনির স্থায়িত্ব ১৫ মিনিট কিংবা তার চেয়েও বেশি হতে পারে।
* ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিকবার ঘটতে পারে।
* সারা শরীরে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
* আংশিক খিঁচুনিও হতে পারে, যেমন শুধু এক পা কিংবা এক হাত।
জটিল ধরনের খিঁচুনি (২০ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে) : এক্ষেত্রে খিঁচুনি সময়সীমা বেড়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যা করা যেতে পারে তা হল :
* কখন খিঁচুনি শুরু হল তা খেয়াল করতে হবে।
* মাথার দিকটা নিচু রেখে শিশুকে শুইয়ে দিতে হবে।
* মুখে কোনো খাবার দেয়া যাবে না।
* খিঁচুনির সময় শিশুকে ঝাঁকানো যাবে না এবং শিশুকে বাঁকা করা যাবে না।
* খিঁচুনির সময় শিশুর মাথায় পানি ঢেলে এবং নরম সুতি-কাপড় ভিজিয়ে গা মুছে দেয়া উচিত এবং তাকে ঢিলেঢালা কাপড় পরানো উচিত।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর কী করণীয়
শিশুকে ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিুোক্ত উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে :
* একবার খিঁচুনির পর শিশুর অবস্থান উন্নতি না হলে।
* একবার খিঁচুনির পর যদি আবারও তা হতে থাকে।
* শিশুর যদি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
জ্বরজনিত খিঁচুনির চিকিৎসা
খিঁচুনি যদি নিজে থেকেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভালো হয়ে যায়, তবে, কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। তা না হলে :
* শিশুর গায়ের কাপড় আলগা করে দিতে হবে। ঘর গরম থাকলে শিশুর গায়ের সব কাপড় খুলে দেয়া যেতে পারে।
* PARACETAMOL SUPPOSITORY দিতে হবে।
* ঠাণ্ডা পানীয় পান করাতে হবে।
* জ্বরের আসল কারণ বের করে মূল রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
জ্বরজনিত খিঁচুনি কি বারবার ঘটতে পারে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একবারই ঘটে থাকে। তবে, প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে অন্তত ৩ জনের ক্ষেত্রে জ্বরের সময় আবারও এটি হতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জ্বরজনিত খিঁচুনি হয়েছিল এমন ১০ জন শিশুর ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে প্রচণ্ড জ্বরের সময় তাদের আবারও দুই থেকে তিনবার খিঁচুনি হয়েছিল। এই খিঁচুনিতে পারিবারিক ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কোনো স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে কি