স্তন ক্যান্সার: এক নজরে স্তন ক্যান্সার নিজ স্তন পরীক্ষা পদ্ধতিঃ

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, নিম্নলিখিত উপায়ে মহিলারা নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করতে পারেন।
১. গোসলের সময় স্তন পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক। এক হাতের তালু ও আঙুলগুলো চ্যাপ্টাভাবে অধিক চাপ না দিয়ে স্তনের ওপর রেখে তা প্রতি অংশে চালনা করতে হবে। এতে উপরোল্লিখিত কোনো অস্বাভাবিকত্ব থাকলে বোঝা যাবে। ক্যান্সার যদিও স্তনের যেকোনো অংশে হতে পারে, তবে স্তনের ওপর ও বাইরের এক-চতুর্থাংশে এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়।
২. এবার গায়ের ওপরের অংশের কাপড় খুলে বড় আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। প্রথমে বাহুযুগল পার্শ্বদেশে ও পরে ওপরের দিকে রেখে স্তন ভালোভাবে দেখতে হবে। স্তনের চামড়া ও বোঁটার কোনো অস্বাভাবিকত্ব এবং দুই স্তনের মধ্যে তুলনামূলক কোনো অসামঞ্জস্য আছে কি না লক্ষ করতে হবে।
৩. এবার বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে এবং আপনার ডান কাঁধের নিচে একটা পাতলা বালিশ রেখে একই সাথে ডান হাত মাথার নিচে রাখতে হবে। এবার বাম হাতের আঙুলগুলো চ্যাপ্টাভাবে ডান স্তনের ওপর রাখতে হবে। তারপর আঙুল দ্বারা ঘড়ির কাঁটা নির্দেশিত দিকে একটি কাল্পনিক বৃত্ত বরাবর মৃদু চাপ দিতে হবে। সব বাইরের বৃত্ত শেষ হলে আঙুলগুলো ইঞ্চিখানেক ভেতরের (স্তনের বোঁটার) দিকে নিয়ে আসতে হবে এবং একই নিয়মে আরেকটি বৃত্ত শেষ করতে হবে। এভাবে দুই স্তনের ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করতে হবে।
সবশেষে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনীর সাহায্যে স্তনের বোঁটায় মৃদু চাপ দিয়ে দেখতে হবে, কোনো পানি বা রক্তমিশ্রিত পানি জাতীয় কোনো কিছু বের হয় কি না।
স্তন ক্যান্সার সারা বিশ্বে মহিলাদের ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারন। “ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ এন্ড হসপিটাল ২০০৫-২০০৭” এর তথ্যমতে বাংলাদেশে মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু হার ২৫.৬%, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এ ক্যান্সারে আক্রান্তের হার প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আশার কথা হল, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরন এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় ৯০% রোগী ৫ বৎসর বা এরও অধিক সময় বেঁচে থাকতে পারেন।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহঃ
১. স্তন কিংবা বগলে চাকা বা দলা অনুভব করা। তবে ঋতুকালীন সময়ে যদি অস্থায়ীভাবে কোন চাকা চাকা বোধ হয় তা তেমন কোন সমস্যা নয়।
২. হাতের নিচে অর্থাৎ বগলের কোথাও নির্দিষ্ট কোন কারন ছাড়াই ফুলে ওঠা।
৩. স্তনের কোথাও লালচে ভাব কিংবা ব্যথা অনুভব করা।
৪. স্তনের কোন অংশ অস্বাভাবিক ভাবে দেবে যাওয়া।
৫. স্তনের ত্বকে লালচে আভা এবং কমলা লেবুর খোসার মত অমসৃণতা দেখা দিলে তা এডভান্সড ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ।
৬. স্তনবৃন্ত দেবে যাওয়া, চুলকানি, জ্বালা পোড়া, খুশ্কি অথবা ক্ষত কিংবা ঘা এর উপস্থিতি।
৭. স্তনবৃন্ত থেকে অস্বাভাবিক নিঃসরণ।
স্তন ক্যান্সারে যাঁদের ঝুঁকি বেশিঃ
* পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি
* ৫০ বছর বয়সের বেশি মহিলাদের
*একটি স্তনে ক্যান্সার হলে অপরটিও আক্রান্ত হতে পারে
* মা, বোন অথবা মেয়ের স্তন ক্যান্সার থাকলে
* জীনগত (এবহবং) কারণে
* রশ্মির বিচ্ছুরণ থেকে (Radiation Exposure)
*অস্বাভাবিক মোটা হলে
* অল্প বয়সে মাসিক হলে
* বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হলে (Menopause)
* বেশি বয়সে প্রথম বাচ্চা নিলে
* মহিলারা যারা হরমোন থেরাপী নেন
* মদ পান করলে
যে ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
*ম্যামোগ্রাম (Mammogram) বা স্তনের এক্স-রে
* ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ড (Breast ultrasound)
* ব্রেস্ট ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমাজিং (Breast magnetic resonance imaging, (MRI))
* বায়োপসি (Biops)
* কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফী স্ক্যান (Computerized tomography- CT scan)
* পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফী স্ক্যান (Positron emission tomography (PET) scan)
স্তন ক্যান্সারের প্রচলিত চিকিৎসা ঃ
* অস্ত্রোপচার ঃ দ্রুত রোগনির্ণয় করতে পারলে অস্ত্রোপচারেই সবচেয়ে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায় – সাধারণত যেসব অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে লাম্পেকটমি (Lumpectomy), ম্যাসটেকটমি (Mastectomy), সেন্টিনেল নোড বায়োপসি (Sentinel node biopsy), এক্সিলারি লিম্ফ নোড ডিসেকশন (Axillary lymph node dissection)
* কেমোথেরাপি
* রেডিয়েশন থেরাপি
* হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি
* পার্টিকেল নাইফ থেরাপি (এটি স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিকতম পদ্ধতি)

সংকলনেঃ ডা. তুহিন মুশফিক (ডি.এম.সি)