সাক্ষাৎকারঃ আনিকা তাহসিন
২০১৩-১৪ সেশনে এম.বি.বি.এস ও বি.ডি.এস. কোর্সে ভর্তির জন্য অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ৩৪৯০টি আসনের জন্য এক অসম লড়াইয়ে অবতীর্ন হন প্রায় ৬৭,০০০ জন শিক্ষার্থী। সকলকে পেছনে ফেলে মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১৯৬.৫ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন আনিকা তাহসিন। মেডিকেল কলেজে সদ্য পা রাখা সদা হাস্যোজ্জ্বল এই হবু চিকিৎসকের মুখোমুখি হয়েছিল “মেডি ভয়েস”।
চলুন শুনি তার কথা:
মেডি ভয়েসঃ শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
আনিকা তাহসিনঃ ধন্যবাদ। ভালো আছি।
মেডি ভয়েসঃ প্রথমেই আসা যাক, আপনার এই সাফল্যের পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন?
আনিকা তাহসিনঃ আমার বাবা-মা এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের অবদানই সবচেয়ে বেশি।
মেডি ভয়েসঃ বিগত কয়েক বছরে এত নম্বর পেয়ে কেউ প্রথম হয়নি। এটি নি:সন্দেহে একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কি?
আনিকা তাহসিনঃ অবশ্যই এটি আমার জন্য খুবই আনন্দের বিষয় যে, আমি এ সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পেরেছি। অনেকটা অবিশ্বাস্যই মনে হয়েছিল প্রথমে, কারণ ২য় Position এর নাম্বার ছিল আমার চেয়ে মাত্র ০.৭৫ কম।
মেডি ভয়েসঃ অনেকেরই Surgeon হওয়ার ইচ্ছা থাকে। আবার অনেকে Cardiologist, Anesthesiologist, Neurologist etc. হতে চায়। আপনার এরকম কোন স্বপ্ন আছে কি?
আনিকা তাহসিনঃ আমার Pediatric Surgeon হওয়ার ইচ্ছা আছে।
মেডি ভয়েসঃ আমরা জেনেছি আপনি BUET এর জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে মেডিকেল অ্যাডমিশন এর প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সেভাবে সময় পাননি। এতো অল্প সময়ে নিজেকে প্রস্তুত করলেন কিভাবে?
আনিকা তাহসিনঃ Admission এর জন্য Preparation এর কথা বলতে গেলে, বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি এইচএসসি এর সিলেবাস এর সাথে অনেকটাই হয়ে গিয়েছিল। এইচএসসি পরীক্ষার পরে Engineering+Biology Course এর সাথে যুক্ত হলেও দূর্ভাগ্যজনকভাবে Viqarunnisa Noon College এ আমাদের সেকশন এর ৫০ জনের সিরিয়ালী ইংলিশে A Grade আসায়, BUET Admission অনিশ্চিত হয়ে যায়। এরপর পুরোপুরি Medical Admission এর Preparation নেয়ার জন্য Divert হয়ে যাই। একটি শীর্ষস্থানীয় কোচিং এর সাথে যুক্ত হই এবং সাথে সাথে বাসায় Dhaka Medical College এর একজন Student প্রস্তুতি নিতে আমাকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করেছিলেন।
মেডি ভয়েসঃ পড়ালেখার বাইরে আপনার কি কোন Extra-Curricular Activities আছে?
আনিকা তাহসিনঃ ছোটবেলায় একসময় শখের বশে নাচ শিখতাম। একটা T.V. Serial এ অভিনয়ও করেছিলাম Class Three তে পড়ার সময়। পরে অবশ্য Continue করা হয়নি। এছাড়া VNC এর English Language Club এর একজন Worker ছিলাম।
মেডি ভয়েসঃ ক্যাপ্টেন্সি, গ্রুপ মনিটরিং সহ ব্যাচ এর নানান দায়িত্ব First girl কে পালন করতে হয়। আর টিচারদের একটা আকর্ষনতো থাকেই First girl কে কেন্দ্র করে। এসব ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা কি রকম?
আনিকা তাহসিনঃ First girl এর অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে বলতে গেলে, আমি Class VI থেকে XII পর্যন্ত একটানা First Place ধরে রাখতে পেরেছিলাম। স্কুলে বিভিন্ন সময় Class Captaincy করেছি। Class IX এ Vice Captain, Class X এ House Captain (অপরাজিত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
মেডি ভয়েসঃ ‘আজ সমাজে ডাক্তাররা কসাই হিসেবে পরিচিত’- সমাজে প্রচলিত এ মুখরোচক কথাটির ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
আনিকা তাহসিনঃ “Arrival of New Life” এবং “Life Saving” -এ ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারেন একজন সুদক্ষ চিকিৎসকই। তবে আন্তরিকতা এবং দক্ষতার অভাবে এ পেশায় নিয়োজিত কিছু ব্যক্তি হয়তো এভাবে অবমূল্যায়িত হয়েছে। সেবাপরায়ণ মানসিকতা এবং আন্তরিকতা থাকলে এ পেশার মাধ্যমেই প্রত্যক্ষভাবে মানুষের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।
মেডি ভয়েসঃ ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার পর বাইরে এসে কি মনে হয়েছে আপনি বাজিমাত করতে চলেছেন?
আনিকা তাহসিনঃ পরীক্ষা দেয়ার পরে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। মনে হয়েছিল, DMC তে Chance পাবো এবং প্রথম দিকেই থাকবো। কিন্তু Question Easy এসেছিল। তাই অনেকেরই Exam ভালো হয়েছিল বলে প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় একেবারে 1st ই হয়ে যাবো, এ আশা করিনি।
মেডি ভয়েসঃ আপনার এই সাফল্যে পরিবারের আত্মীয় স্বজন অনেক গর্বিত হয়েছেন নিশ্চয়ই। কাকে সবচেয়ে বেশি গর্বিত বলে মনে হচ্ছে?
আনিকা তাহসিনঃ আমার কাছে বাবাকেই সবচেয়ে বেশি গর্বিত বলে মনে হচ্ছে (হাসি)।
মেডি ভয়েসঃ আপনার অন্যান্য একাডেমিক কৃতিত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন। এই যেমন Govt./Non Govt. Scholarship, Board Places etc.
আনিকা তাহসিনঃ Class VII এ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং SSC তে Merit List এ Position ছিল। এছাড়া আমার স্কুল, Viqarunnisa Noon School এ ক্লাস ten এ থাকতে দশ বছর (1-10) এ সর্বাধিক কৃতিত্বের জন্য ‘Best Girl’ হিসেবে Gold Medal পেয়েছি।
মেডি ভয়েসঃ আপনিতো এখন সেলিব্রেটি। এটি চিন্তা করে কেমন লাগছে?
আনিকা তাহসিনঃ (হাসি) সেলিব্রেটি হওয়ার মত এখনো কিছুই হতে পারিনি। আমি একজন সফল মানুষ হতে চাই।
মেডি ভয়েসঃ আপনিতো বুয়েটেও ভালো ফল করেছেন। সেখানে কী রেজাল্ট করেছেন? আপনার নিজের ইচ্ছা ছিল কিসে পড়াশুনো করার?
আনিকা তাহসিনঃ বুয়েটের জন্য পুরো প্রস্তুতি নিলে অবশ্যই আরো ভালো করতে পারতাম। বুয়েটে আমার মেরিট পজিশন ছিল ১৬০। বুয়েটে অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে পারবো কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না। তাই পরীক্ষার ১৫ দিন আগে selected হয়েছি জেনে বুয়েট এ্যাডমিশন টেস্ট এ attend করেছিলাম। তবে আমি মেডিকেলেই পড়ছি।
মেডি ভয়েসঃ এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে আছে? থাকলে সেটি কীভাবে?
আনিকা তাহসিনঃ “সুস্থ শিশু-সবল জাতি” – তাই বিশেষভাবে শিশুদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে আছে। সামর্থ্য হলে একটি হাসপাতাল করতে চাই যেখানে সব শ্রেণীর শিশুদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারবো।
মেডি ভয়েসঃ এ বছর যারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেবে, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
আনিকা তাহসিনঃ যেহেতু MCQ Type এর Question থাকে, তাই বইয়ের খুঁটিনাটি তথ্যগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। ভালো Position এর জন্য Physics ও Chemistry এর Math Practice বাদ দিলে চলবে না। এছাড়া English ও General Khowledge এর Preparation ও যথেষ্ট ভালো হতে হবে। অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের সাথে স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাও।
মেডি ভয়েসঃ ‘মেডি ভয়েস’ এর পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন।
আনিকা তাহসিনঃ আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
মনোকথা ডেস্ক