বয়স্কদের অ্যাজমার আধুনিক চিকিৎসা

imagesসারা বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি লোক শ্বাসনালরি সচরাচর সমস্যা-অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। তাদের ৯০% এরও বেশি অত্যাধুনিক চিকিৎসা পায় না এবং অনেক রোগী মারা যায় যদিও এ মৃত্যুর ৮০% প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি আধুনিক চিকিৎসা ও ডাক্তারের তদারকির মাধ্যমে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়া যায়।
অ্যাজমা ব্যাপারটা কি?
অ্যাজমা বা হাঁপানি আসলে শ্বাসনালীর অসুখ। যদি কোন কারণে শ্বাসনালীগুলো অতিমাত্রায় সংবেদনশীল (হাইপারসেনসিটিভ) হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনায় উদ্দীপ্ত হয় তখন বাতাস চলাচলের পথে বাধার সৃষ্টি হয়, ফলে শ্বাস নিতে বা ফেলতে কষ্ট হয়। কেন হয়?
জেনেটিক পরিবেশগত কারণে কারও কারও বেশি হয়ে থাকে। ঘর-বাড়ির ধুলো ময়লায় মাইট জিবাণু, ফুলের বা ঘাসের পরাগ রেণু, পাখির পালক, জীব-জন্তুর পশম, ছত্রাক, কিছু কিছু খাবার, কিছু কিছু ওষুধ, নানারকম রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি থেকে এলার্জিজনিত অ্যাজমা হয়ে থাকে।
কাদের হতে পারে হাঁপানি?
যে কোন বয়সের স্ত্রী, পুরুষ, শিশু-কিশোর যে কারো হতে পারে। যাদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের হাঁপানি আছে তাদের এ রোগ হবার আশঙ্কা প্রবল। আবার দাদা-দাদীর থাকলে (বাবা-মা’র না থাকলেও) নাতি-নাতনী বা তাদের ছেলেমেয়েরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পিতৃকুলের চেয়ে মাতৃকুল থেকে হাঁপানিতে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি থাকে।
অ্যাজমাতে কেন এই শ্বাস কষ্ট?
আমাদের শ্বাসনালীগুলো খুবই ক্ষুদ্র। ২ মি.মি. থেকে ৫ মি.মি. ব্যাস বিশিষ্ট। চারদিকে মাংসপেশি পরিবেষ্টিত। এই ক্ষুদ্র শ্বাসনালীর ভেতর দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় খুব সহজেই বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে। যদি কখনো এলার্জিক বা উত্তেজক কোন জিনিস শরীরে প্রবেশ করে তখন শ্বাসনালীর মাংস পেশীগুলো সংকুচিত হয়। ফলে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। তাছাড়া উত্তেজক জিনিসের প্রভাবে শ্বাসনালীর গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় আঠালো মিউপাস জাতীয় কফ, আর ইনফেকশনের কারণে শ্বাসনালীর ভেতরের দিককার মিউকাস আবরণী আঠাল কফ উঠিয়ে ফেলার লক্ষ্যে অনবরত কাশি হয়ে থাকে। কখনো কখনো এই শ্বাসনালী এত সরু হয় যে, বাতাস বায়ুথলিতে পৌঁছয় না, তখন শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। এটা খুবই মারাত্মক অবস্থা। এ অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। অ্যাজমা কি ছোয়াছে রোগ? না, অ্যাজমা  ছোঁয়াচে রোগ নয়। পারিবারিক বা বংশগতভাবে অ্যাজমা হতে পারে। কিন্তু ছোঁয়াচে নয়। অ্যাজমায় আক্রান্ত মায়ের বুকের দুখ খেয়ে শিশুদের অ্যাজমায় আক্রান্ত হবার আশঙ্কা নেই। মায়ের সংস্পর্শ থেকেও হওয়ার আশঙ্কা নেই।
বংশগতভাবে অ্যাজমার ঝুঁকি কতটা? মাতৃকুলে হাঁপানি থাকলে তিনগুণ বেশি রিস্ক আর পিতৃকুলে হাঁপানি থাকলে অনেকটা কম রিস্ক। মায়ের হাঁপানি থাকলে মোটামুটিভাবে বলায় তিন সন্তানের মধ্যে একটির হাঁপানি, একটির আপাত সুস্বাস্থ্য এবং একটির অস্বাভাবিক শ্বাসনালীর সংকোচন থাকতে পারে। শেষেরটির হাঁপানি না হয়ে সর্দি কাশির প্রবণতা থাকতে পারে।
কিভাবে এই রোগ চিহ্নিত করা যায়?
অ্যাজমা রোগের প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণগুলো হলো-
* বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ * শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট * দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা * ঘন ঘন কাশি * বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধ ভাব * রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা
আপনার হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে বুঝবেন কিভাবে?
উপশমকারী ওষুধের পরিমাণ বাড়তে থাকা এবং ইনহেলার দ্বারা উপশম ৩-৪ ঘণ্টার বেশি যদি না থাকা। বাতে শ্বাসকষ্টে ঘুম ভেঙে যাওয়া স্বাভাবিক কাজকর্মে শ্বাসকষ্ট হওয়া। পিক ফ্লো ধীরে ধীরে কমা। এসব উপসর্গের উপস্থিতি মানে আপনার হাঁপানি আর নিয়ন্ত্রণে নেই। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কি বিপদ হতে পারে? মারাত্মক জটিল অ্যাজমা হতে পারে। স্থায়ী পুরনো অ্যাজমায় পরিবর্তন হতে পারে। স্থায়ী পুরনো অ্যাজমা থেকে হার্ট ফেলিউর হয়ে পানি আসতে পারে এবং রোগী শয্যাশায়ী হয়ে যেতে পারে। শরীরে সব সময় অক্সিজেন কম থাকতে পারে। তাই সবসময় অবসাদগ্রস্ত মনে হবে। অক্সিজেনের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে এবং অকালে নিজেকে বৃদ্ধদের মতো দুর্বল মনে হবে। ফুসফুসের অংশবিশেষ চুপসে যেতে পারে। নিউমোনয়াও হতে পারে। পায়ে পানি আসতে পারে। মুখ থেকে ছিটেফোঁটে রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে। এক্ষেত্রে কাশি বন্ধ করার ওষুধটা দেয়া জরুরি।
মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কিনা বুঝবেন কিভাবে? যখন উপশমকারী ইনহেলার ব্যবহার করে ৫-১০ মিনিটের ভেতর শ্বাসকষ্ট লাঘব হচ্ছে না তখন বুঝতে হবে আপনার হাঁপানি মারাত্মক অবস্থা ধারণ করতে যাচ্ছে। রোগীর সঠিক পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ অ্যাজমার উপসর্গ ও তীব্রতা পরিবর্তিত হয়, ফলে চিকিৎসা পরিবর্তেনের দরকার হয়। অ্যাজমার জন্য দায়ী এলারজেনের পরিবর্তন হতে পারে। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। নতুন সংযোজন, পুনঃপরীক্ষণ এবং তাগিদের দরকার হতে পারে।
* প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি?
* রক্ত পরীক্ষা : বিশেষ রক্তে ইয়োসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কিনা তা দেখা। * সিরাম আইজিই’র মাত্রা: সাধারণত এলার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে আইজিই’র মাত্রা বেশি থাকে। * স্কিন প্রিক টেস্ট : এই পরীক্ষায় রোগীর চামড়ার উপর বিভিন্ন এলার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং এই পরীক্ষাতে কোন কোন জিনিসে রোগীর এলার্জি আছে তা ধরা পড়ে। * প্যাচ টেস্ট : এই পরীক্ষায় রোগীর ত্বকের উপর করা হয় * বুকের এক্সরে : হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই বুকের এক্সরে-করে নেয়া দরকার যে অন্য কোন কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না। * স্পাইরোমেট্রি বা ফুসফুসের ক্ষমতা দেখা: এই পরীক্ষা করে রোগীর ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যায়।
অ্যাজমার জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা?
উপশমকারী ওষুধ ৫-১০ মিনিট পর আবার নিতে হবে। নিজেকে শান্ত রাখুন, স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে চেষ্টা করুন। যেভাবে বসলে আরাম লাগে সেভাবে বসুন। আপনার হাত হাঁটুর ওপরে রাখুন, যাতে সোজা হয়ে বসে থাকতে পারেন। শ্বাস তাড়াহুড়া করে নেবেন না, তাড়াহুড়া করে শ্বাস নিলোব সাদগ্রস্ত হয়ে যাবেন। যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তার বা সাহায্যকারীর শরণাপন্ন হোন। সমন্বিতভাবে এলার্জির চিকিৎসা হলো : * এলার্জেন পরিহার : হাঁপানির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো যে জিনিসে এলার্জি তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা। তাই অ্যাজমা রোগীদের প্রথমেই এলার্জি টেস্ট করে জানা দরকার তার কিসে কিসে এলার্জি হয়। * ওষুধ প্রয়োগ : নানা ধরনের হাঁপানির ওষুধ আছে। প্রয়োজন মতো ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
ক) শ্বাসনালীর সংকোচন প্রসারিত করতে ওষুধ ব্যবহার করা ব্রস্কোডাইলেটর যেমন-সাববিউটামল, থিউফইলিন, ব্যামবুটারন। এ ওষুধগুলো টেবলেট, সিরাপ, ইনজেকশন, ইনহেলার হিসেবে পাওয়া যায়।
খ) প্রদাহ নিরময়ের ওষুধ যেমন-কর্টিকোস্টেরয়েড  বেকলোমেথাসন, ট্রাইঅ্যামসিনোলোন, ফ্লোটিকাসন এগুলো ইনহেলার রোটাহেলার, একুহেলার ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং লিউকোট্রাইন নিয়ন্ত্রক- মন্টিলুকাস্ট, জাফিরলুকাস্ট ব্যবহার করা। * এলার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি : এলার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও অ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে এলার্জিজনিত অ্যাজমা রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করেন। এটাই অ্যাজমা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকা একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। আগে ধারণা ছিল অ্যাজমা একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে এলার্জিজনিত অ্যাজমা রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলথে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। বর্তমানে এলার্জিজনিত অ্যাজমা রোগের ভ্যাকসিনসহ উন্নত চিকিৎসা আমাদের দেশেই হচ্ছে।
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
দি এলার্জি এন্ড অ্যাজমা সেন্টার
৫৭/১৫ পান্থপথ, ঢাকা
ফোন : ৮১২৯৩৮৩
মোবাইল : ০১৭২১৮৬৮৬০৬।

– See more at: http://www.dailyinqilab.com/2015/02/04/237605.php#sthash.B5GI6PS3.dpuf

শিশুর জ্বর ও খিঁচুনি

ডা. রাবেয়া রহমান

 

আইসিডিডিআরবি অতিমাত্রায় জ্বরে ভুগছে এমন শিশুদের জ্বরজনিত খিঁচুনি সাধারণত দেখা যায়। যে শিশু কানের প্রদাহ, সংক্রমণ, ঠাণ্ডা, সর্দি, ইত্যাদিতে বেশি মাত্রায় ভুগে থাকে, সে শিশু জ্বরজনিত খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়। কিছু মারাত্মক সংক্রমণও এ খিঁচুনির কারণ হতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি।

এ ধরনের খিঁচুনির ক্ষেত্রে কারণ শনাক্ত করে যদি চিকিৎসাসেবা দেয়া যায়, তবে, কোনো রকম স্থায়ী ক্ষতি ছাড়াই শিশুকে সুস্থ করা যায়।

জ্বরজনিত খিঁচুনি কেন ও কাদের হয়

শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এমন যে কোনো অসুখই এ ধরনের খিঁচুনির জন্য দায়ী। এটি কোনো অসুখ নয়, অন্য কোনো অসুখের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কতগুলো রোগ আছে যেগুলো খিঁচুনির কারণ হিসেবে চিহ্নিত। যেমন-

* কানে প্রদাহ এবং সংক্রমণ

* সর্দি, কাশি ও ঠাণ্ডা লাগা

* ইনফ্লুয়েঞ্জা

* ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোনো অসুখ

* নিউমোনিয়া

* মেনিনজাইটিস

* কিডনির সংক্রমণ

সাধারণত ছয় বছর বয়সের আগে শতকরা ৩ জন শিশু এ ধরনের খিঁচুনিতে ভুগে থাকে। তবে, খিঁচুনি বেশি হতে দেখা যায় ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে। সাধারণত ৬ মাস বয়সের নিচে এবং ৬ বছরের পর জ্বরজনিত খিঁচুনি কম হতে দেখা যায়। জ্বরজনিত খিঁচুনি ৩ ধরনের হতে পারে :

সাধারণ খিঁচুনি (২০ জন আক্রান্ত শিশুর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে) : এই ধরনের খিঁচুনিই সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। শিশুর শরীর এতে লালচে রঙ ধারণ করতে পারে, শরীর শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং শরীর আঁকাবাঁকা আকার ধারণ করতে পারে। তবে, এই অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। শিশু কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে যেতে পারে। জ্বর কমে গেলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শিশু সুস্থ বোধ করতে শুরু করে। এ খিঁচুনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বারবার ফিরে আসে না।

অল্প জটিল ধরনের খিঁচুনি (২০ জন শিশুর মধ্যে ৪ জনের ক্ষেত্রে) : এটিও সাধারণ খিঁচুনির মতো। তবে, এতে আরও কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে, যেমন :

* খিঁচুনির স্থায়িত্ব ১৫ মিনিট কিংবা তার চেয়েও বেশি হতে পারে।

* ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিকবার ঘটতে পারে।

* সারা শরীরে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।

* আংশিক খিঁচুনিও হতে পারে, যেমন শুধু এক পা কিংবা এক হাত।

জটিল ধরনের খিঁচুনি (২০ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে) : এক্ষেত্রে খিঁচুনি সময়সীমা বেড়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যা করা যেতে পারে তা হল :

* কখন খিঁচুনি শুরু হল তা খেয়াল করতে হবে।

* মাথার দিকটা নিচু রেখে শিশুকে শুইয়ে দিতে হবে।

* মুখে কোনো খাবার দেয়া যাবে না।

* খিঁচুনির সময় শিশুকে ঝাঁকানো যাবে না এবং শিশুকে বাঁকা করা যাবে না।

* খিঁচুনির সময় শিশুর মাথায় পানি ঢেলে এবং নরম সুতি-কাপড় ভিজিয়ে গা মুছে দেয়া উচিত এবং তাকে ঢিলেঢালা কাপড় পরানো উচিত।

প্রাথমিক চিকিৎসার পর কী করণীয়

শিশুকে ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিুোক্ত উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে :

* একবার খিঁচুনির পর শিশুর অবস্থান উন্নতি না হলে।

* একবার খিঁচুনির পর যদি আবারও তা হতে থাকে।

* শিশুর যদি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

জ্বরজনিত খিঁচুনির চিকিৎসা

খিঁচুনি যদি নিজে থেকেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভালো হয়ে যায়, তবে, কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। তা না হলে :

* শিশুর গায়ের কাপড় আলগা করে দিতে হবে। ঘর গরম থাকলে শিশুর গায়ের সব কাপড় খুলে দেয়া যেতে পারে।

* PARACETAMOL SUPPOSITORY দিতে হবে।

* ঠাণ্ডা পানীয় পান করাতে হবে।

* জ্বরের আসল কারণ বের করে মূল রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।

জ্বরজনিত খিঁচুনি কি বারবার ঘটতে পারে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একবারই ঘটে থাকে। তবে, প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে অন্তত ৩ জনের ক্ষেত্রে জ্বরের সময় আবারও এটি হতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জ্বরজনিত খিঁচুনি হয়েছিল এমন ১০ জন শিশুর ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে প্রচণ্ড জ্বরের সময় তাদের আবারও দুই থেকে তিনবার খিঁচুনি হয়েছিল। এই খিঁচুনিতে পারিবারিক ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোনো স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে কি

সাধারণত এ রোগে কোনো স্থায়ী ক্ষতি হয় না। রোগ-পরবর্তী কোনো ক্ষতি ছাড়া পুরোপুরি ভালো হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে যে অসুখের কারণে খিঁচুনি হচ্ছে তার মাধ্যমে ক্ষতি হতে পারে। সেজন্য, যে কারণে জ্বর হচ্ছে তার চিকিৎসা করা জরুরি।

– See more at: http://www.jugantor.com/stay-well/2015/01/31/213263#sthash.LU4Vu9dK.dpuf

পাইলস:সমস্যা যখন পাইলস

অধ্যাপক ডা. একে এম ফজলুল হক

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫

পাইলস বলতে মলদ্বারের আশপাশের রক্তনালী ফুলে ব্যথার সৃষ্টি হওয়া বোঝায়। এটি মলদ্বারের ভেতরে কিংবা বাইরে হতে পারে। ব্যথা, চুলকানি বা রক্তপাত হতে পারে। এটি অস্বস্তিকর এবং অসহনীয় সমস্যা।

কারণ

* যারা শাক-সবজি বা পানি কম খান তারা দীর্ঘদিন কোষ্টকাঠিন্যে ভুগতে পারেন। এ থেকে পাইলসের উৎপত্তি হতে পারে।

* অতিরিক্ত ওজন পাইলস হওয়ার আশংকা বাড়িয়ে দেয়।

* গর্ভাবস্থার শেষের দিকে অনেকে পাইলসের সম্মুখীন হতে পারেন। বাচ্চার গ্রোথের সঙ্গে সঙ্গে মলদ্বারে চাপ পড়ে পাইলস হয়।

* পায়ুপথে যৌনমিলনে অভ্যস্ততা পাইলসের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।

* বয়সের সঙ্গে পায়ুপথের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। যাদের পরিবারে পাইলস হওয়ার ইতিহাস আছে, তারা বৃদ্ধ বয়সে পাইলসের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই জীবনের প্রথম থেকে হেলদি খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।

পাইলস রোগ হলে যে খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

* পাস্তা, ক্র্যাকার, ভাত, বিস্কুট, রুটি ইত্যাদিতে আঁশ কম থাকে। ধরুন আপনি একবেলার খাবারে নিয়মিত পাস্তা খান বা এক প্যাকেট বিস্কুট খান বা অল্প পরিমাণ সবজি দিয়ে বা সবজি ছাড়া প্রচুর পরিমাণে রুটি বা ভাত খান- এ ধরনের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত থাকলে আপনার শরীরে আঁশ গ্রহণ কম হবে। ফলে কোষ্টকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কোষ্টকাঠিন্য তথা পাইলস নিরোধে কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে আঁশের অনুপাত ঠিক থাকতে হবে।

* ফ্যাটি ও উচ্চ সুগারযুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহণের অভ্যাস ও কোষ্টকাঠিন্য তথা পাইলস ঘটাতে পারে। যেমন- গরুর মাংস, চিজ, মাখন, ফ্রাইড খাবার, চকোলেট, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি।

করণীয়

ব্যায়াম : ব্যায়ামের মাধ্যমে কোষ্টকাঠিন্য রোগ থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুক্তি পাওয়া যায়। এর ফলে পাইলস হওয়ার আশংকাও কমে যায়। মাটিতে সোজা শুয়ে পড়ুন, পা মাটিতে মেশানো থাকবে, পায়ের পাতা ছাদমুখী থাকবে। এবার পেটের পেশি ভেতরের দিকে টেনে ধরে আস্তে আস্তে শ্বাস নিন ও ডান পা আস্তে আস্তে দূরে নিন। যত দূর পারেন করুন, এর পর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনুন। এরপর বাম পা ব্যবহার করে একই ব্যায়াম করুন।

পাইলস হলে যত্ন

মলদ্বারের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখুন। সুতি ও ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরিধান করুন। অন্তর্বাসের ভেতরে নরম প্যাড ব্যবহার আপনাকে স্বস্তি দেবে। মাঝে মাঝে sitz bath নিন। এর অর্থ হল কুসুম গরম পানিতে কোমর পর্যন্ত ডুবিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকা। ডাক্তারের পরামর্শে পাইলসে ক্রিম লাগান। পাইলসে মাঝে মাঝে বরফ প্রয়োগ করতে পারেন।

– See more at: http://www.jugantor.com/stay-well/2015/01/24/209606#sthash.xFaLHfmo.dpuf

চিকিৎসা:বিএসএমএমইউতে সর্বাধুনিক ব্রংকোসকপি মেশিনের উদ্বোধন

সোমবার, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

Untitled-1কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)’র কেবিন ব্লকের ২য় তলায় ২২২ নম্বর রুমে সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপাইরেটরি মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে বক্ষব্যাধি রোগীদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাসেবার জন্য সর্বাধুনিক ব্রংকসকপি (ইৎড়হপযড়ংপড়ঢ়ু) মেশিন চালু হয়েছে। এরফলে বিএসএমএমইউ’র রেসপাইরেটরি (বক্ষব্যাধি) ইউনিটের চিকিৎসাসেবার মান ও সেবা আরো উন্নত হবে বলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও রোগীরা মনে করছেন।
বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত মেশিনটির উদ্বোধন করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মোঃ রুহুল আমিন মিয়া, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এমএ জলিল চৌধুরী, রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ব্যক্ষব্যাধি (রেসপাইরেটরি) বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোঃ জিলন মিয়া সরকার, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. শামীম আহমেদ, ডা. রাজাশীষ চক্রবর্তী প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ব্রংকসকপি মেশিন চালু হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি রোগীরা স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো সংশ্লিষ্ট রোগীদের এসব পরীক্ষার জন্য বাইরে যেতে হবে না। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাসেবার মান ও রোগীদের আস্থা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে দেশের রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের বিশেষ করে সেভেন সিসটার্স রোগীদের আকৃষ্ট করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ব্যক্ষব্যাধি (রেসপাইরেটরি) বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ব্রংকসকপি মেশিন চালু হওয়ায় ফুসফুসের জটিল রোগ যেমনÑফুসফুসের ক্যান্সার, যক্ষ্মা, পুঁজজমা, নিউমোনিয়া, রক্তক্ষরণ, সংক্রমণ, আইএলডি ইত্যাদি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাসেবা প্রদান সম্ভব হবে।

http://www.bkagoj1.com/online/2015/01/26/42200.php
এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের পেছনে মাঠের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য একটি ক্যান্টিনেরও উদ্বোধন হয়।

– See more at: http://www.bkagoj1.com/online/2015/01/26/42200.php#sthash.aQBieSFw.dpuf

মৃত্যুঝুঁকি কমাবেন যেভাবে

মৃত্যুঝুঁকি কমাবেন যেভাবেশীর্ষ নিউজ ডটকম, ঢাকা : দৈনিক মাত্র ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে  অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাজ্যর একদল গবেষক এমন তথ্য জানিয়েছে।

তাদের মতে, ২০ মিনিট হাঁটার উপকারিতা প্রায় প্রতিদিন ব্যায়াম করার মতোই। এটির মাধ্যমে  ১৬ থেকে ৩০ শতাংশ অকালমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যেতে পারে।

ইউরোপের ১২ বছরের বেশি বয়সী  ৩ লাখ ৩৪ হাজার নারী-পুরুষ এ গবেষণায় অংশ নেন।

– See more at: http://www.sheershanews.com/2015/01/17/65453#sthash.JsIjUohc.dpuf

কুষ্ঠরোগ নির্মূলে সমাজ সচেতনাই যথেষ্ট

কুষ্ঠ মানবসভ্যতার একটি প্রাচীন রোগ। প্রায় ৪ হাজার বছর আগের ইতিহাসে মিসর, চিন ও ভারতে এ রোগের উল্লেখ রয়েছে। জানুয়ারির শেষ রোববার ‘বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস’ পালন করাও হয়ে থাকে। জনসাধারণকে এ রোগ সম্পর্কে সচেতন, কুষ্ঠ নিরাময় ও প্রতিরোধে সম্পৃক্ত করতেই দিবসটি পালন করা হয়। অজ পর্যন্ত কুষ্ঠ পৃথিবীব্যাপী জনসাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে বিরাজ করছে। এটি নির্মূল ও প্রতিরোধে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আক্রান্ত দেশগুলো। বিশ্বব্যাপী প্রায় শূন্য দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। এছাড়া প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভয়, কুসংস্কার ও লজ্জার কারণে আক্রান্তরা এটি প্রকাশ করতে চান না বা চিকিৎসা গ্রহণে কুণ্ঠাবোধ করেন।
লক্ষণ : এ রোগের জীবাণু সাধারণত ত্বক ও ত্বকের নিকটবর্তী স্নায়ুকলা আক্রান্ত করে। আক্রান্ত স্থান অপেক্ষাকৃত বিবর্ণ হয়ে থাকে এবং ম্যাকুউল, প্যাপিউল, নোডিউল বা প্লেক আকারে দেখা দিতে পারে। স্নায়ু আক্রান্ত হলে স্থানটি অবশ থাকে।
যেভাবে ছড়ায় : আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ত্বক ও শ্বাসনালির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগ। আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
জটিলতা : আক্রান্ত স্থানভেদে জটিলতার পার্থক্য আছে। হাত, পা বিকলাঙ্গ হতে পারে। চোখ নাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। অনুভূতি কমে যাওয়ার কারণে আগুনে পোড়া বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
চিকিৎসা : আমাদের দেশে বিনামূল্যে এ রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সময়মতো ওষুধ গ্রহণ করলে কোনো জটিলতা থাকে না। তবে জটিলতার কারণে শল্যচিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধ : রোগী ও সমাজ সচেতনতার মাধ্যমে অনেকাংশেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অন্যদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করবেন না। বিছানা, পরিধেয় বস্ত্র ও প্রসাধনী আলাদা করে রাখুন। হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই রুমাল ব্যবহার করুন। চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। পূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণ করুন। সতর্কভাবে চলাফেলা করুন। বিশেষ করে আগুন থেকে দূরে থাকুন।
-এম আর করিম রেজা
কনসালট্যান্ট
চর্ম, অ্যালার্জি ও কসমেটিকজনিত রোগ
মেডিকেয়ার, শাহজাদপুর, ঢাকা

– See more at: http://www.dainikamadershomoy.com/2015/01/25/188997.html#sthash.xVLCPRSS.dpuf

পোড়া রোগীর পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি

আমাদের দেশে পুড়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গাড়িতে পেট্রোবোমায় আক্রান্ত হয়ে। এছাড়া বিভিন্ন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি ও কলকারখানা বা অফিস অথবা   বাড়িতে প্রতিনিয়তই  ঘটছে  বিভিন্ন  দুর্ঘটনা। ফলে আগুনে পোড়া  রোগীর সংখ্যা  আরও বাড়ছে । এই পোড়া রোগীদের একটি জটিলতা  হলো মাংসপেশির সংকোচন। তাই আক্রান্ত অঙ্গটি অকোজো হয়ে পড়ে। এই মাংসপেশির সংকোচন প্রতিরোধে প্রয়োজন সঠিক ফিজিওথেরাপি  চিকিৎসা। এখানে কোনো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন স্ট্রেটিং এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম ও অর্থোটিকস কিংবা প্রস্থেসিসের মাধ্যমে রোগীকে পুনর্বাসন সহায়তা করে থাকেন। এ জন্য চাই, দীর্ঘমেয়াদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, কিছু েেত্র অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু অপারেশনের আগে ও পরে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য রোগীকে পুনর্বাসনে চাই সমন্বিত চিকিৎসা।
-ডা. এম. ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানম-ি, ঢাকা

– See more at: http://www.dainikamadershomoy.com/2015/01/25/188994.html#sthash.DHG8zSvd.dpuf

হাসপাতাল:সৈয়দ আলীর প্যারালাইসিস হাসপাতাল-সচেতন হোন সাধারন মানুষ

ওষুধ পায়ের চাপ, তেলপড়া, তাবিজ ও ফু

সৈয়দ আলীর প্যারালাইসিস হাসপাতালে বিচিত্রসব চিকিৎসা দিচ্ছেন কবিরাজ। কখনও পায়ের চাপে পিষা হচ্ছে রোগীকে। কখনও বা দেয়া হচ্ছে তেলপড়া। কখনও ঝাড় ফুঁ। গত ২০ বছর ধরে এভাবেই তিনি চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। কিন্তু এ হাসপাতালে এসে কেউ ভাল হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এমন নজির মিলেনি একটিও। তারপরও মানুষ আসছেন। চিকিৎসা নিচ্ছেন। কবিরাজের নাম মো. সৈয়দ আলী। ভিজিটিং কার্ডে লিখেছেন আলহাজ্ব মো. সৈয়দ আলী আল-কাদরী কবিরাজ। বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। বাড়ি সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের শিতাহরণ গ্রামে। তিনি ডাক্তারি বা কবিরাজিও পড়েননি। স্বাস্থ্য বিভাগের কোন অনুমোদন ছাড়াই বিটঘর বাজারে টিনের তৈরি ঘরে খুলে বসেছেন হাসপাতাল। নাম দিয়েছেন মাদানীয়া গাউছিয়া বাতেনিয়া সৈয়দীয়া দরবার শরীফ। মাসিক আয় দেড় লক্ষাধিক টাকা। মহিলা বা পুরুষের শরীরের যে কোন স্থানে পা দিয়ে চেপে ধরে ঝাড়ফুঁক করা তার চিকিৎসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়া প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করেন তাবিজ ও তেল পড়া। সরজমিনে তার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল বড় দু’টি টিনের ঘর। দূর-দূরান্ত থেকে নানা সমস্যা নিয়ে আসছে রোগী। নির্ধারিত ফি দিয়ে ভর্তি হচ্ছে।  বেশির ভাগ সিট মাটিতে। মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছে ভিন্ন বয়সের পুরুষ-মহিলা মিলে ৩০-৪০জন প্যারালাইসিস রোগী। ৫ থেকে ৮শ’ টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে ক্রয় করছেন পড়া তেল। পাশে বসে স্বজনরা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে তেল মালিশ করছেন। ঘরটির এক পাশে বাঁধা আছে বাঁশ। ওই বাঁশ ধরে ব্যায়াম করছেন রোগীরা। ঘরের মধ্যবর্তী স্থানে একটি চৌকিতে বসে আছেন কবিরাজ সৈয়দ আলী। তার ঠিক পেছনে বসে আছেন চারজন হুজুর। তারা সিরামিকের প্লেটে লাল কালি দিয়ে বিরামহীন ভাবে লিখছেন তাবিজ। তাদেরকে মাসিক ভিত্তিতে দেয়া হয় বেতন। সৈয়দ আলীর সামনে একটি টেবিল। টেবিলে সাজানো রয়েছে তেল ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল। একটু পরপর তেল ভর্তি বোতলে ফুঁ দিচ্ছেন। মাঝে-মধ্যে তার সামনে হাজির করা হচ্ছে রোগী। তিনি রোগীর হাতে ধরে টানছেন আর ডান পা দিয়ে রোগীর কোমরে কখনও পেটে চাপ দিয়ে ধরে ফুঁ দিচ্ছেন। আর বলছেন যা ভাল হয়ে যাবে। এখানে রয়েছে অনেকগুলো মাটির চুলা। রোগীরা নিজ খরচে বাজার করে পর্যায়ক্রমে রান্না করছেন। রয়েছে একাধিক টয়লেট। তবে এখানকার স্যানিটেশন ও হাইজেনিক ব্যবস্থা অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ। সনদবিহীন ডাক্তার সৈয়দ আলীর চিকিৎসা সেবা নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেক রোগী। ওই হাসপাতালে দেড় মাস ভর্তি থাকা ইসলামাবাদ গ্রামের আলী আকবর (৬০)সহ একাধিক রোগী বলেন, এখানে কোন চিকিৎসা হয় না। শুধু অনাচার। সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। খাওয়া ঘুমে আরাম নেই। ধোঁকা দিয়ে অর্থ  লোপাট করা হচ্ছে। ভর্তির সময় দিতে হয়েছে ৩ হাজার ২৭০ টাকা। সরিষার তেল এক বোতলের দাম ৮শ’ টাকা। সপ্তাহে লাগে দুই বোতল তেল। শুধু তেলের দামই দিয়েছি ৮ হাজার টাকা। আবার রয়েছে একটি দান বাক্স। সেখানেও দিতে হয় টাকা। আশুগঞ্জ চরচারতলার মো. ফাইজুর রহমান (৩০) বলেন, ১৮শ’ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি আজ সাতদিন। কিছু বুঝতেছি না। মাধবপুরের শতানন্দ শর্মা (৭০) বলেন, এক বছর ধরে হাত ও মুখের একপাশ অবশ। ৭/৮শ’ টাকা দরে তিন ধরনের তেল দেন। দিনে ৪/৫ বার মালিশ করতে হয়। এখনও তেমন কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। সিলেট কানাইঘাটের আহসান হাবিব বলেন, এক গাড়ি চালকের কাছে খবর পেয়ে এখানে এসেছি। এখন একটু ভাল। সুলতানপুরের আবদুর রউফ (৪৮) বলেন, হঠাৎ শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে যায়। এরপর এখানে আসি। এখন কিছুটা আরাম মনে হচ্ছে। সরাইল ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল বলেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে টিনশেড ঘরে এমন জটিল রোগের চিকিৎসা চলতে পারে না। সনদ ও প্রশিক্ষণবিহীন লোকের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব কে নিবে? আলহাজ্ব মৌঃ সৈয়দ আলী আল-কাদরী কবিরাজ রোগী ভর্তির সময় ২-৩ হাজার টাকা নেয়া ও তেল পড়া) বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, রোগের ধরন বুঝে ভর্তি ফি নেয়া হয়। সব রোগীর ওষুধ লাগে না। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহ মো. মুসা খান বলেন, এটা কোন চিকিৎসা নয়। মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ঠকানো হচ্ছে। অবৈজ্ঞানিক পন্থায় অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে শোষণ করা হচ্ছে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, বিটঘর গ্রামের কথিত কবিরাজের আদিম পদ্ধতিতে টিনশেড ঘরকে হাসপাতাল বানিয়ে চিকিৎসার বিষয়টি প্রচলিত আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নার্সিং: সেবা ও পেশা

অনেকেই মানুষের সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে চান। এমনই সেবামূলক এক পেশা হচ্ছে নার্সিং। এই পেশায় একদিকে যেমন মানুষের সেবা করা যায়, তেমনি ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। দেশে এখন প্রায় সব জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। আরও হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছরই নার্সের প্রয়োজন হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠাaf483dacb414031e116f4e4540f30e3e-1নে নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের সেবা পরিদপ্তর। এই পরিদপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ১০০ জনকে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। সামনে আরও কয়েক হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে বলে জানা গেছে। তাই এ পেশায় যাঁরা ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাঁরা এখন থেকে এর প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারেন। এ পেশা শুরুর আগে আপনাকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অথবা ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং (বিএসসি)—এসব কোর্স করতে হবে। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সরকারি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কলেজ আছে ৪৩টি। আর বেসরকারি কলেজ আছে প্রায় ৭০টি। এ ছাড়া সরকারি বিএসসি ইন নার্সিং কলেজ আছে ৯টি, বেসরকারি আছে ২১টি। এসব প্রতিষ্ঠান বছরের বিভিন্ন সময় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

পেশা হিসেবে নার্সিং
স্কয়ার কলেজ অব নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মেজর (অব.) বদরুলওয়ারা বেগম বলেন, নার্সিং পেশা একটি জনসেবামূলক পেশা। এ পেশায় আসতে হলে মানুষের সেবার মানসিকতা থাকতে হবে। ১৯৯৭ সালে টাঙ্গাইল নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি পাস করেন রোকসানা খাতুন। পরে তিনি দেশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি জানান, নার্সিং পেশাটি একটি মহৎ পেশা। কাজটিও আনন্দের। একজন নার্সকে সাধারণত চিকিৎসকের নানা কাজের সহকারী হিসেবে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের আউটডোর ও ইনডোর, অপারেশন থিয়েটারে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া রোগীকে ওষুধ খেতে সহায়তা করাসহ নানাভাবে সেবা করারও কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল থেকে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তো বটেই, বিদেশেও নার্সিং পেশার দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, কাতার, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। তাই এ পেশায় বর্তমানে যেমন রয়েছে সম্মান, তেমনি রয়েছে সম্ভাবনা। এখানেও অন্যান্য চাকরির মতো ভালো বেতন ও অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে। বদরুলওয়ারা বেগম বলেন, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নার্স থেকে সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সুপারিনটেনডেন্ট, নার্সিং ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষক হতে পারেন। এ ছাড়া সরকারের সেবা পরিদপ্তরের উচ্চপদস্থ পদে যেতে পারেন নার্সরা।

শিক্ষাগত যোগ্যতা
নার্সিং পেশায় আসতে চাইলে আবেদনকারীকে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত যেকোনো নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং বা বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স পাস করতে হবে। তাই এসব কোর্স করে নিতে পারেন। আর ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা যেকোনো বিভাগ থেকে ন্যূনতম এসএসসি পাস লাগবে। অন্যদিকে বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের জন্য বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জীববিদ্যাসহ এইচএসসি পাস হতে হবে। এ ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৬ পয়েন্ট থাকতে হবে। তবে কোনো পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ-২.৫০-এর কম থাকা যাবে না। আর বর্তমানে এই ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সগুলো তিন বছরের ও বিএসসি কোর্সটি চার বছরমেয়াদি হয়ে থাকে।

আবেদন ও নির্বাচন-প্রক্রিয়া
এসব কোর্স করানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। ধাপে ধাপে কয়েকটি পরীক্ষা যেমন—লিখিত, মৌখিক ও ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ভর্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এসব পেশায় মেয়েদের পাশাপাশি ১০ শতাংশ ছেলেদেরও ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে।

খরচ
সরকারি নার্সিং কলেজগুলো থেকে বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স করতে চাইলে খরচ পড়বে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর বেসরকারি কলেজগুলোতে খরচ হবে চার বছরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। তবে বেসরকারি পর্যায়ের কলেজগুলোতে খরচ প্রতিষ্ঠানভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। আর সরকারি কলেজগুলোতে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং করতে কোর্স ফি লাগে না। প্রতি মাসে তাঁরা কিছু টাকা ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকেন।

http://www.prothom-alo.com/life-style/article/431554/%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%BE

মানব সেবা-মানবতার চেতনায় শীতার্তদের পাশে

1508532_204105186466399_1216473952_n

২০১৩ এর ১৬ই ডিসেম্বর। বাংলাদেশীরা তাদের বিজয় উদযাপন করে রেকর্ড গড়ে। Doctors of Koshoregonj বিজয় উদযাপন করলো একটু আলাদা করে। তাদের উদযাপনের অনুষঙ্গ তারা নিজেরা ছিল না, ছিল কিছু অসহায় শীতার্ত মানুষ। কটিয়াদীর মানিকখালীতে কিছু মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েই যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি পেল আয়োজকরা।

পেছনের কথাঃ

২০১১ সালের এপ্রিল মাসের দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার মেডিকেল ছাত্র, ডাক্তারদের নিয়ে শুরু হয় ফেসবুক গ্রুপটির পথ চলা। এর মাধ্যমে সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকলেও যেন খুব কাছাকাছি আসার সুযোগ পায়। এরই মধ্যে গ্রুপের আয়োজনে ভৈরবের কালিকাপ্রসাদে সাড়ে সাতশ মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রায় দুইশত মানুষের বিনামূল্যে ব্লাড গ্রুপিং করা হয়। গ্রুপের সৌজন্যে ২০১২ ও ২০১৩ সালে ইফতার পার্টি আয়োজিত হয়। এতিমদের জন্যও ২০১৩ সালে আয়োজন করা হয় ইফতার পার্টি। আর শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা আসে ডা: মাজহারুল হক সজিবের কাছ থেকে, ২০১২ সালে। কিন্তু বাস্তবায়িত হয় ২০১৩ সালে। এক্ষেত্রে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ছিল খুবই প্রশংসনীয়। এক্ষেত্রে ডা: রাশেদ, ডা: হাবিব, ডা: বেঞ্জামিন, ডা: রানা, ডা: দ্বীন ইসলাম, ডা: ইমরান, সাখাওয়াত সোহাগসহ সকলেই যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছেন। এমনকি বাদ পড়েনি নতুন চান্স-প্রাপ্তরাও। এই মহতী উদ্যোগকে সামনে রেখে একটি স্লোগানেরও প্রয়োজন দেখা দেয়। অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়ঃ ‘‘পেশায় সেবা, চেতনায় মানবতা।”

অভিভূত এলাকাবাসীঃ

বর্তমান যুগে সবাই যেখানে সাহায্যের হাত বাড়ায় কোন উদ্দেশ্য নিয়ে, সেখানে একদল তরুণ-প্রাণ যেভাবে নিঃস্বার্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল, তা দেখে বাহবা না দিয়ে পারলেন না উক্ত এলাকা চান্দপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মো: মাহতাব উদ্দিন। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করে তাঁর এলাকায় এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি ধন্যবাদ জানান এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। একজন প্রতিবন্ধীকে শীতবস্ত্র প্রদান করে অনাড়ম্বর এ অনুষ্ঠানটির মূল পর্ব শুরু হয়। তারপর প্রায় দুইশত অসহায় ছিন্নমূল মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় শীতবস্ত্র। শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল হাতে অনুষ্ঠানস্থল ছাড়ার আগে কয়েকজনের চোখে অশ্রুও দেখা যায়। তবে এই অশ্রু ছিল তৃপ্তির, খানিকটা আনন্দেরও।

আয়োজকদের কথাঃ

ফেসবুক ভিত্তিক এই গ্রুপের এডমিনেরা বলেন, “দুঃস্থ ও ছিন্নমূল মানুষেরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদের প্রতি দায়বন্ধতা থেকেই আমরা এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এ ধরনের সামাজিক কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে।” অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা দেন ডা: মাইদুল ইসলাম রাশেদ, ডা: বেঞ্জামিন, আয়োজনের পরিকল্পনাকারী ডা: সজিব প্রমূখ। বক্তারা ফেসবুকভিত্তিক এই গ্রুপের সকল সদস্যকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সম্প্রতি ডা: মুরাদ হত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। ডাক্তারদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিও উঠে আসে। স্বাধীন দেশে চিকিৎসকদের মত বুদ্ধিজীবীদের ওপর এ আক্রমণ সত্যিই উদ্বেগজনক বলেও মন্তব্য করা হয়।

পরিশিষ্ট

শুরুতে সবার মাঝেই ছিল উদ্দীপনা, আর অনুষ্ঠান শেষে তা পরিনত হয় অনাবিল আনন্দে- “যে আনন্দ অনুভব করা যায়, ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না।” এ আনন্দ অসহায়দের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারার তৃপ্তি মাত্র। যারা এ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি তারাও পরবর্তীতে অংশ গ্রহণের আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন। এ আয়োজনে স্লোগান দিতে পেরে, অংশগ্রহণ করতে পেরে সকলেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেছে।

# Debanjan Pandit, SSNIMC.